শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন

‘বাংলাদেশ’ নামক জায়গা ঘুরে আসুন……….!

‘বাংলাদেশ’ নামক জায়গা ঘুরে আসুন……….!

স্বদেশ ডেস্ক: ইয়েরেভান এয়ারপোর্টে অবতরণ করে ডলার এক্সচেঞ্জ করতে গেলে একজন আর্মেনিয়ানের সঙ্গে কথা হয়। আমরা বাংলাদেশ থেকে আসছি শুনেই তিনি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে যা বললেন তার অর্থ হচ্ছে, ‘ইয়েরেভানের একটি জেলার নাম বাংলাদেশ।’
আমাদের কৌতূহলি জিজ্ঞাসা, ইজ ইট ফান? আর ইউ শিওর? জবাবÑ নো নো, ইটস নট ফান। ইউ ক্যান ভিজিট দেয়ার। ‘বাংলাদেশ নামে আর্মেনিয়ার একটি জেলা আছে’ প্রথমবারের মতো এ কথা শোনার পর নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এতে একটু বিস্ময় নিয়েই বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এলাম। বাইরে আমাদের রিসিভ করতে অপেক্ষা করছিলেন মূকাভিনয় উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্যরা। বের হতেই দেখলাম ‘লিওনিড ইয়েঙবারিয়ান ইন্টারন্যাশনাল মাইম ফেস্টিভাল’ লেখা পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন একজন দীর্ঘদেহী তরুণ। আমাদের দেখে এগিয়ে এলেন। তার সঙ্গে এলেন একজন তরুণী। প্রাইভেটকারে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে করতে কথা হয় তাদের সঙ্গে। স্মার্ট তরুণ বাগরাত এবং তরুণী আর্মেনি মুহতাসিয়ান। মুহতাসিয়ান ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী। একজন আর্টিস্ট এবং একই সঙ্গে জবও করেন।
বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি জেলা রয়েছে ইয়েরেভানে। আমরা এর পরও বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। আবার মনে মনে ভাবলাম থাকতেও পারে। আমাদের ঢাকায় যদি আর্মানিটোলা থাকতে পারে তবে আর্মেনিয়ায় বাংলাদেশ নামে কিছু থাকতে পারবে না কেন। তাই আমরা আর্মানিটোলার ইতিহাসটি সংক্ষেপে তাদেরকে জানালে তারাও কৌতূহলী হলেন।
আর্মেনিয়ায় বাংলাদেশ নামক জেলায় ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান নিয়েই রাতে আমাদের জন্য বুকিং করা হোটেলে উঠলাম। এরপর রাতেই ফাইনাল পরিকল্পনা করলাম, সকালে আমাদের প্রথম কাজ হবে এখানকার ‘বাংলাদেশ’ সফর করা। উৎসব আয়োজক কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক এনার সঙ্গে সাক্ষাতেও জানতে চাইলাম বাংলাদেশ জেলা প্রসঙ্গে। কেন এই নামকরণ, বিষয়টি সম্পর্কে তিনিও স্পষ্ট নন। তবে তার ধারণা, হয়তো কোনো ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। তার সঙ্গে আলাপ সেরেই আমরা মস্কুভিয়ান স্ট্রিট থেকে ৯৯ নাম্বার বাসে রওনা হলাম বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে।
পাহাড়-পর্বতে ঘেরা আর্মেনিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ইয়েরেভানের আয়তন ৮৮ বর্গমাইল। উচ্চতা ৯৮৯৪ মিটার (৩২৪৬১ ফুট)। মূল কেন্দ্র রিপাবলিক স্কয়ার থেকে যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, ততই নিচে নেমে যাচ্ছি। ওদিকটায় রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ। কিছু সবুজ মাঠও আছে। আরেকটু সামনে গিয়ে বিশাল এক পুকুরের দেখা মিলল। পাহাড়ে সবুজ বৃক্ষও দেখতে পাচ্ছি। ৩০ মিনিট পর পৌঁছলাম। দারুণ সাজানো সুন্দর এই বাংলাদেশ। রাস্তায় বিল বোর্ডে ইংরেজি বানানের ‘বাংলাদেশ’ নাম খুঁজে পেলাম না। আর্মেনিয়ান ভাষায় সবকিছু লেখা। কিন্তু স্থানীয়রা উচ্চারণ করছেন ‘বাংলাদেশ’। গাড়িচালক বলছেন, ‘বাংলাদেশ পৌঁছে গেছি, নেমে পডুন’।
স্থানীয় একটি দোকানে ঢুকে আমাদের পরিচয় দিতেই ব্যাপক কৌতূহলী দোকানদার। ইংরেজি বলতে পারেন না একটুও। কিছুটা বুঝতে পারেন। সেলফি তোলার অফার দিলে রাজি হলেন। কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম বাংলাদেশ কিভাবে হলো? তিনিও বলতে পারলেন না তেমন কিছু। ধারণা করা হয়, ঢাকায় আর্মানিটোলার একটি ঐতিহাসিক ধারা এখানে ভূমিকা রেখেছে। অষ্টাদশ শতকে যারা ব্যবসা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে আর্মেনিয়ায় গিয়েছিলেন তারা সম্ভবত আর্মেনিয়ায় এই নামকরণ করেন। কিন্তু তা অনুমাননির্ভর। তবে গুগল সার্চ করে এই এলাকার নাম পাওয়া গেল ‘মালাতিয়া সেবাস্তিয়া’।
অফিসিয়াল নাম এটি হলেও স্থানীয়দের কাছে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবেই পরিচিত। বাসযাত্রী, দোকানদার, পুলিশসহ যাকেই বলুন না কেন সবাই চেনেন বাংলাদেশ নামেই। এমনকি আমরা যখন নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলি যে, ‘উই আর ফ্রম বাংলাদেশ’ তখন প্রথমে সবাই আর্মেনিয়ার বাংলাদেশের কথাই মনে করছেন পরে আমাদের নিজের দেশের বর্ণনা দিলে বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট হয়।
গুগলে প্রাপ্ত একটি আর্টিকেল থেকে জানা গেল এই এলাকার নাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এ ছাড়া আর্মেনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করার প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান থেকেও এমন নামকরণ করা হতে পারে।
এই আর্টিকেলের সঙ্গে সহমত পোষণ করে স্থানীয় অনেকে বলছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিপীড়িত মানুষের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই জায়গার নাম বাংলাদেশ নামকরণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানিয়ে আর্মেনিয়ার এই জেলার নামকরণের খবর এবং পুরো ইয়েরেভানে তা পরিচিত হওয়ার বিষয় বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জন্য আনন্দের, গর্বের। আমরা বেশ আনন্দ নিয়ে এই বাংলাদেশে ঘুরলাম। অনেকগুলো ছবি তুললাম। স্থানীয় দোকানদারের সঙ্গে সেলফিটাও তুললাম। এরপর এক কেজি আপেল কিনে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এলাম ইয়েরেভানে। ফেরার সময় বারবার মনে হচ্ছিল বোধহয় কিছু রেখে যাচ্ছি, সত্যি রেখে যাচ্ছি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877